হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, এক ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনায় ইবনে আবিল হদীদ তাঁর শিক্ষক আবু বকর জওহরীর কাছে তুলে ধরেন এক মর্মস্পর্শী অধ্যায়—যেখানে উঠে আসে হিজরতের পথে নবী করিমের (সা.) কন্যা হযরত জয়নব (সা.আ.)-এর উপর সংঘটিত একটি নৃশংস হামলার বিবরণ এবং এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহর রাসুলের (সা.) কঠোর প্রতিক্রিয়া।
হিজরতের পথে মুশরিকদের বাধা
মক্কা থেকে মদীনার পথে আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)সহ বনি হাশিমের নারীদের নিরাপদে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় মক্কার বহু মুশরিক অশ্বারোহী কাফেলাটিকে ঘিরে ধরে।
এই হামলাকারীদের মধ্যেই ছিল হাব্বার ইবনে আসওয়াদ। তার হাতে থাকা বর্শা দিয়ে হযরত জয়নবের (সা.) পালকিতে প্রচণ্ড আঘাত হানে। বর্শাটি সরাসরি তাঁকে স্পর্শ না করলেও, আতঙ্কজনক এই হামলা ও ধাক্কায় তাঁর গর্ভের ছয় মাসের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।
নবী করিমের (সা.) ঘোষণা: অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের অবস্থান
ঘটনার সংবাদ যখন রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে পৌঁছায়—যিনি মানবতার প্রতি অফুরন্ত রহমত—তখন তিনি কঠোর ঘোষণা দেন:
“হাব্বারের রক্ত হালাল। তাকে হত্যা করা হবে—যদি সে কাবার পর্দা আঁকড়ে ধরেও আশ্রয় নিতে চায়।”
এই ঘোষণার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় যখন জানা যায়—
এ সেই নবী (সা.) যিনি তাঁর চাচা হযরত হামজাকে (আ.) হত্যা করা ওয়াহশীকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, শুধু বলেছিলেন:
“আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম, কিন্তু আমার সামনে আর কখনো এসো না।”
ইতিহাসের প্রশ্ন: যদি একই ঘটনা ফাতিমা (সা.আ.)-এর সঙ্গে ঘটত?
ইবনে আবিল হদীদ তাঁর শিক্ষককে প্রশ্ন করেন—
যে নবী (সা.) ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেও হাব্বারের রক্তকে বৈধ ঘোষণা করলেন, যদি তিনিই জীবিত থেকে জানতে পারতেন যে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর ছয় মাসের ভ্রূণ মুহসিন দরজার আঘাতে নষ্ট হয়েছে—তাহলে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে তিনি কী নির্দেশ দিতেন?
ঐতিহাসিক সূত্রের উল্লেখ
“আল-ইস্তিয়াব ফি মারিফাতিল আসহাব” গ্রন্থের এক খণ্ডের সংস্করণের ৭৪৬ নম্বর পৃষ্ঠায় হাব্বারের জীবনীতে উল্লেখ আছে—
হাব্বারই হযরত জয়নব (সা.)-এর গর্ভপাতের কারণ হয়েছিল। এ ঘটনার পর নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছিলেন:
“যে হাব্বারকে পাবে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেবে।”
উপসংহার
ঘটনা স্পষ্ট করে যে—
নবী করিমের (সা.) কাছে তাঁর কন্যাদের প্রতি অত্যাচার বা তাঁদের সন্তানদের ক্ষতি কোনোভাবেই অমার্জনীয় অপরাধ ছিল না।
আল্লাহর রাসুল (সা.) শান্তি ও ক্ষমার প্রতীক হলেও, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বিশেষত নারীর উপর হামলা ও মাতৃত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো অপরাধে তিনি সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট